সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, জুলাই ১৬, ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টারঃ ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (নওদাপাড়া) রাজশাহীর ইনচার্জ, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল খুলনার প্রথম সহকারী সুপার, খুলনার সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা জি এম ইলিয়াস হোসাইন (৫৮) ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির খুলনা মহানগরীর সভাপতি (১৯৯১-৯২) ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন টাইফুন শিল্পীগোষ্ঠী’র পরিচালক (১৯৮২-৮৩) এর দায়িত্ব পালন করেন।
ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (নওদাপাড়া) রাজশাহীর বরাত দিয়ে মরহুমের পারিবারিক সূত্র জানায়, রোববার (১৪ জুলাই) জি এম ইলিয়াস হোসাইনের ডায়াবেটিকস পরীক্ষা করা হয় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (নওদাপাড়া) রাজশাহীতে। তখন ডায়াবেটিকস ছিল ৩১। এরপর তিনি এ বিষয়টি সকলকে গোপন রাখতে বলেন। ডায়াবেটিকসের মাত্রা এতো বেশি থাকায় অনেকের মধ্যে সন্দেহ হয়। পরে তিনি রাজশাহী ইবনে সিনা হাসপাতালে আবারো ডায়াবেটিকস পরীক্ষা করান। তখন ডায়াবেটিকস দেখা যায় ২৯। রাতে তিনি বাসায় ফিরে এশার নামাজের পর খুলনায় তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ এর সাথে সর্বশেষ কথা হয়। এরপর আর কারোর সাথে যোগাযোগ হয়নি।
সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে না যাওয়ায় হাসপাতাল থেকে বার বার মোবাইলে কল করা হলেও সেটি রিসিভ না হওয়ায় সন্দেহ হয়। বিকেলে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার বাসায় গিয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে ভেতর থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় বাড়িওয়ালা ও পুলিশকে খবর দেন। বিকেল ৪টার দিকে বাড়িওয়ালা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয়। সেখান কফিন নিয়ে আসা হয় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (নওদাপাড়া) রাজশাহীর চত্বরে। এ সময় তার সহকর্মীদের আহাজারীতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বেলা সাড়ে ১১টায় এখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন হাফেজ মো. সোহেল রানা। জানাজায় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ রাজশাহীর প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. মো. সানাউল হক মিয়া, ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. জাওয়াদুল হক, ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (নওদাপাড়া) রাজশাহীর ডেপুটি ডাইরেক্টর প্রফেসর ডা. সুজন আল হাসানসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শত শত মুসল্লী অংশ গ্রহণ করেন। দুপুর ১২টার দিকে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সন্ধ্যায় খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানাধীন গোয়ালখালী মোড়স্থ তার নিজ বাড়িতে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স এসে পৌছায়। এ সময় তার ছাত্রজীবনের সহযোদ্ধা ও কর্মজীবনের সহকর্মীদের আহাজারীতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
মাগরিববাদ গোয়ালখালী মোড়ে মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। জানাজায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, নায়েবে আমীর এডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আল মুজাহিদ, মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম, মোকাররম বিল্লাহ আনসারী, মোশাররফ হোসেন আনসারী, জাহিদুর রহমান নাঈম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী ও সেক্রেটারি এস এম মাহফুজুর রহমান, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ নূরুল্লাহ, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার (একাউন্টস) সামসুল আলম, আইটি ইঞ্জনিয়ার হারুনুর রশীদ, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল খুলনার ভারপ্রাপ্ত সুপার এ এস এম মামুন শাহীন, প্রশাসনিক ইনচার্জ আমীর হামজা ও শফিকুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার মুসল্লী অংশ গ্রহণ করেন।
পরে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স তার গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার দেড়–লি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৯ টার দিকে বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন হাফেজ ইমরান খালিদ। জানাজায় মরহুমের আত্মীয়-স্বজনসহ শত শত মুসল্লী অংশ গ্রহণ করেন। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মাতা আছিয়া বেগমের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা মহানগরীর সাবেক সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা জি এম ইলিয়াস হোসাইনের মৃত্যুতে গভীর শোক এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য মাওলানা মশিউর রহমান খান ও মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, অধ্যক্ষ মাওলানা কমিরুল ইসলাম, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গওসুল আযম হাদী, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী ও সেক্রেটারি এস এম মাহফুজুর রহমান, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ নূরুল্লাহ, টাইফুন শিল্পীগোষ্ঠী’র পরিচালক মো. নূরুজ্জামান নোমান ও সহকারী পরিচালক মেসকাত । ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল খুলনার সুপার এ এস এম মামুন শাহীন অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন।
শোকবানীতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাবেক ছাত্র নেতা জি এম ইলিয়াস হোসাইনকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা ক্ষমা ও রহম করুন এবং তাকে নিরাপত্তা দান করুন। তাকে সম্মানিত মেহমান হিসেবে কবুল করুন ও তার কবরকে প্রশস্ত করুন। তার গুনাহখাতাগুলোকে নেকিতে পরিণত করুন। তার জীবনের নেক আমলসমূহ কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। নেতৃবৃন্দ শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদেরকে এ শোকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন।