সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন নিযুক্ত হয়েছে আইন মেনেই

প্রকাশিত: সোমবার, জানুয়ারী ১৫, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২৩ এর ২৩ (৫) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন নিযুক্ত করা হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৮৯ তম বিশেষ সভায়, গত ১১ ডিসেম্বর গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন হিসেবে নিযুক্ত করার যে আদেশ প্রদান করা হয়, তা আইন মেনেই করা হয়েছে বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২৩ এর ২৩ (৫)ধারাটি অনুযায়ী “প্রত্যেক অনুষদের অন্তর্গত সকল বিভাগের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অধ্যাপকদের মধ্যে উক্ত অনুষদের ডীন পদ আবর্তিত হইবে এবং তিনি দুই বৎসরের মেয়াদে সিন্ডিকেট কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন”। এ আইন অনুযায়ী গত ২৫ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সিন্ডিকেটের ৮৭তম সভায় নিয়ম অনুযায়ী ডীন নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে মোতাবেক গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর নাম ডীন হিসেবে উল্লেখ করে কার্যবৃত্ত তৈরী করে সিন্ডিকেটের সদস্যদের প্রেরণ করা হয়। সিন্ডিকেট সদস্যগণের মধ্য থেকে কেবলমাত্র একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন ডীন হবে মর্মে সংশোধনী দেন এবং সর্বাধিক সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে ডীন নিযুক্ত করা হয়। কার্যবৃত্তে একজন সদস্যের বাইরে অন্য কোন সদস্য সংশোধনী না দিলেও ২০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ছয় সদস্য ডীন নিয়োগ আদেশ সংশোধনীর জন্য সিন্ডিকেটের সভাপতি বরাবর আবেদন দেন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অন্তর্গত আটটি (০৮) বিভাগ রয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে তৎকালীন ডীন প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুব আলম এর মেয়াদ শেষ হলে নিয়ম অনুযায়ী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনের ডীন হওয়ার কথা ছিলো। সে সময় তিনি (প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন) ডীনের দায়িত্ব গ্রহণ না করে কোন প্রকার ফাইল নোট কিংবা লিখিত কোন আবেদন বা পত্র ছাড়াই অনুষদের পরবর্তী জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফকে ডীনের দায়িত্ব প্রদান করেন। গত ১১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ তৎকালীন ডীন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ এর মেয়াদ শেষ হলে তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন পরবর্তী জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক প্রফেসর ড. মোঃ সাইফুল ইসলামকে ডীনের দায়িত্ব প্রদান করেন। গত ১১ ডিসেম্বর প্রফেসর ড. মোঃ সাইফুল ইসলামের ডীন হিসেবে মেয়াদ শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২৩ এর ২৩ (৫) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদকে ডীন হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৩ ডিসেম্বর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আবু জাকির মোর্শেদ স্বাক্ষরিত “অবৈধ ডীনের আওতায় পরীক্ষা নিবেন না” বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সংশ্লিষ্ট দিনের পরীক্ষা স্থগিত করেন, অথচ ১৭ ডিসেম্বর তারিখের পরীক্ষা ঐ ডীনের আওতায় যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ডীন নিয়োগ বা সিন্ডিকেটের কোন বিষয়ে একজন বিভাগীয় প্রধানের “অবৈধ” বলারও এখতিয়ার নেই, বিষয়টি একান্তই সিন্ডিকেটের এখতিয়ারে। প্রফেসর মোঃ আবু জাকির মোর্শেদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এখতিয়ার বহির্ভূত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত ও উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষূন্ন করার জন্যই তিনি এ কাজ করেছেন বলে কর্তৃপক্ষের মনে করে। বিষয়টিকে বাংলাদেশের সেশনজটমুক্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটে ডুবিয়ে অকার্যকর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণত করার একটি ঘৃন্য চক্রান্ত।
২৩ ডিসেম্বর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ পরীক্ষা না নিলেও অনুষদভূক্ত অন্যান্য বিভাগসমূহ তাদের নির্ধারিত পরীক্ষা গ্রহণ করে। এছাড়া অনুষদভূক্ত অন্য সাতটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের সাথে গত ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখ উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর সভা করে তাদের মতামত জানতে চাইলে, তারা ডীন নিয়োগ সঠিক হয়েছে বলে মতামত প্রদান করেন এবং পরীক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ে নতুন ডীনকে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া বলেন, “সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কতিপয় ব্যক্তির সৃষ্টি। যখন দেশ নির্বাচনমূখর, তখনই একটি পক্ষ নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় মগ্ন, তখনই একটি পক্ষ বিশ^বিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে উম্মুখ ছিলো। নির্বাচন পরবর্তী নতুন সরকার গঠনকালীণ সময়েও তারা এসব অপতৎপরতা থেকে সরে যায়নি। সিন্ডিকেট সবার উপরে, আমদেরকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মানতে হবে”।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মিহির রঞ্জন হালদার বলেন, “নিযুক্ত ডীনের অধীনে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকরা পরীক্ষা নিতে না চাওয়া নিয়মতান্ত্রিক নয়। তবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের কথা তথাকথিত শিক্ষকরা না ভাবলেও আমাকে ভাবতে হয়। আমি তাদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ‘সিন্ডিকেট’ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবকিছু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য, তাদের নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তাদেরকে শুধরে নিতে হবে”। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন যাতে সুন্দরভাবে চলে, সেজন্য সিন্ডিকেট কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং শিক্ষার্থীরাও তা মেনে নিয়েছে।”

অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

আরো পড়ুন