রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত: শনিবার, জানুয়ারী ১৪, ২০২৩
জিয়াউর রহমান ,পিএমপি
উপসচিব ও কনসালটেন্ট, এটুআই প্রোগ্রাম
বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত বিষয় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর মধ্যে কি আছে এবং কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। গত ৭ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গঠিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এর ৩য় সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বপ্রথম ঘোষণা করেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাস্তবায়ন করা হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভার সিদ্ধান্তের প্রায় আট মাস পর গত ১২ ডিসেম্বর, ২০২২ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অর্থ্যাৎ তিনি ঘোষণা দিলেন আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। তিনি বললেন, ‘আমরা আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই সঙ্গে বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। সেই সাথে তিনি স্পষ্টতই জানিয়ে দিলেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর চারটি স্তম্ভের কথা যথাঃ (১) স্মার্ট সিটিজেন; (২) স্মার্ট গভর্নমেন্ট; (৩) স্মার্ট ইকোনমি এবং (৪) স্মার্ট সোসাইটি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ‘সজীব ওয়াজেদ জয়’ তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুকে উল্লেখ করেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সফল বাস্তবায়নের পর আমাদের লক্ষ্য এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, ২০৪১ সালের মধ্যে সারাদেশের সব স্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। তিনি স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য তিনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি এই চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে মর্মে উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে চারটি ভিত্তি ১। স্মার্ট সিটিজেন, ২। স্মার্ট ইকোনমি, ৩। স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং ৪। স্মার্ট সোসাইটির কথা উল্লেখ করেন। আগামীর বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সরকার যেখানে প্রতিটি জনশক্তি স্মার্ট হবে, প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা’ সব কিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে। ই-এডুকেশন, ই-হেলথ, ই-কৃষিসহ সব কিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করতে সক্ষম হব এবং সেটা মাথায় রেখেই কাজ চলছে মর্মে উল্লেখ করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের সিদ্ধান্তের পর ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে বর্তমান সরকার। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের জন্য গত আগস্ট ১৬, ২০২২ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে গঠিত হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’র সদস্য সংখ্যা ৩০ জন যারমধ্যে রয়েছে পাঁচজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবসহ বিভিন্ন সরকারি -বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবকে এই টাস্কফোর্সের সদস্য-সচিব করা হয়েছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এর নয়টি কার্যপরিধিও সুস্পষ্ট করা হয়েছেঃ যথা- ১. অগ্রসরমান তথ্যপ্রযুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান; ২। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা প্রদান; ৩. স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক পরিমন্ডলে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিধি-বিধান প্রণয়নে দিক নির্দেশনা প্রদান; ৪. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান; ৫. এজেন্সি ফর নলেজ অন এরানোটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান; ৬. ব্লেন্ডেড এডুকেশন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ফাইভজি সেবা চালু পরবর্তী সময়ে ব্যান্ডউইথের চাহিদা বিবেচনায় চতুর্থ সাবমেরিন ক্যাবলে সংযোগের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান; ৭. রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মেড ইন বাংলাদেশ পলিসি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে দিক নির্দেশনা প্রদান; ৮. আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান এবং ৯. স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ (Smart Citizen, Smart Society, Smart Economy & Smart Government) বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা প্রদান। (সূত্রঃ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১৬ আগষ্ট, ২০২২ প্রজ্ঞাপন নং ১৪৯ )
সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত অক্টোম্বর ১৮ ,২০২২ তারিখে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে ২৩ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবকে নির্বাহী কমিটির সদস্য-সচিব করা হয়েছে ।‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটি’র কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছেঃ ১। বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সুপারিশ প্রদান; ২। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ (Smart Citizen, Smart Society, Smart Economy & Smart Government) বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; ৩। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সকল পর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও দিক নির্দেশনা প্রদান; ৪। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ; ৫। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; ৬। স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক এবং বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিধিবিধান প্রণয়ন; ৭। রপ্তানির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ পলিসি প্রণয়ন এবং সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; ৮। আর্থিক খাতের ডিজিটাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; ৯। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা প্রদান। (সূত্রঃ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১৮ অক্টোম্বর ,২০২২ প্রজ্ঞাপন নং ১৮২)।
মূলতঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের লক্ষ্য সরকার চারটি ভিত্তি নির্ধারণ করেছেনঃ (১)স্মার্ট সিটিজেন, ২। স্মার্ট ইকোনমি, ৩। স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং ৪। স্মার্ট সোসাইটি। অর্থ্যাৎ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলাকে বুঝানো হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর করা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সরকারি বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হবে। সুতারং সরকার আগামী ২০৪১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আদর্শগত এমন রূপান্তর ঘটাবে যেখানেঃ (ক) সকল সেবার ভিড়ে না হারিয়ে নাগরিকগণ নিজের প্রয়োজনীয় সেবা সহজে খুঁজে পাবেন; (খ) সেবা গ্রহিতার দায় নয় সেবা প্রদানকারীর দায়কে শক্তভাবে দেখা হবে; (গ) সরবরাহ কেন্দ্রিক থেকে চাহিদা কেন্দ্রিক সার্ভিসের যোগান হবে; (ঘ) নাগরিকগণকে এখন ডিজিটাল মাধ্যমেও নানান চ্যানেলে (অ্যাপ, ওয়েব, কল সেন্টার ইত্যাদি নানা প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে হয়) সেবা গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশে একটি মাত্র প্লাটফর্ম থেকে নাগরিকগণ সকল চাহিত সেবা পাবেন। নানান পরিচয় নম্বরের (যেমন এনআইডি, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন নম্বর ইত্যাদি) পরিবর্তে একটি পরিচয় নম্বর (ইউনিক আইডি) দিয়ে সকল কার্যক্রম সম্পাদন এবং (ঙ) সরকারি সেবা প্রদানকে দেখা হবে সেবা গ্রহিতার চোখে, সেবা দাতার চোখে নয়।
ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/ সংস্থা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ গ্রাম, শহর, অফিস সবই স্মার্ট হবে । স্মার্ট সিটি, স্মার্ট ভিলেজ এবং স্মার্ট অফিস ধারনাকে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে এটুআই প্রকল্প। ইতিমধ্যে, এটুআই প্রকল্পের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অংশীজেনর সহায়তায় ‘স্মার্ট ভিলেজ’ কনসেপ্টের পাইলটিং করা হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ও নাটোর জেলার সিংড়ায় উপজেলায়। একই সাথে ‘স্মার্ট সিটি’ পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে বুয়েটে, ‘স্মার্ট অফিস’ ধারণায় যেখানে সকল নাগরিক সেবা পাবে অনলাইনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে গাজীপুর জেলা এবং বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায়। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যপূরণে যথার্থ জ্ঞান, দক্ষতা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে এটুআই প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে ‘সিভিল সার্ভিস ২০৪১: ডিজিটাল লিডারশীপ জার্নি’।
স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বিনির্মাণের লক্ষ্যে একটি সময়োপযোগী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ‘জাতীয় ব্লেন্ডেড শিক্ষা ও দক্ষতা বিষয়ক মহাপরিকল্পনা’-এর খসড়া প্রণয়নে ব্লেন্ডেড শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্স-কে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে এটুআই । ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এটুআই-কর্তৃক উদ্ভাবিত মাল্টিমিডিয়া টকিং বই প্রণয়ন ও এর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এটুআই সহযোগিতায় বিচারিক ব্যবস্থাকে সহজ করতে চালু হয়েছে অনলাইন কজলিস্ট, জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং আমার আদালত (মাইকোর্ট) অ্যাপ যা আগামী ২০৪১ সালের স্মার্ট বিচারিক ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবে।
স্মার্ট ইকোনমির অংশ হিসেবে বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রবাস যাত্রা সহজ করতে এবং প্রবাসে যাওয়ার প্রস্তুতিমূলক কাগজপত্র ও সেবাসমূহ একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস পয়েন্ট থেকে প্রদানের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে প্রবাসী হেল্প ডেস্ক চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের আর্থিক অন্তর্ভূক্তি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা ও আর্থিক অন্তর্ভূক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে এটুআই চালু করেছে ‘সাথী’ নামক একটি নেটওয়ার্ক। বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহযোগিতায় এটুআই প্রাথমিক পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তা নিয়ে এই নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু করেছে। দেশের সকল পরিষেবা বিল, শিক্ষা সংক্রান্ত ফি ও অন্যান্য সকল ধরনের সরকারি সেবার ফি/বিল প্রদানের পদ্ধতি সহজ ও সমন্বিতকরণে চালু হওয়া সমন্বিত পেমেন্ট প্ল্যাটফরম ‘একপে’-তে বিভিন্ন ধরনের করতে নতুন ৮টি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নতুন পেমেন্ট চ্যানেল যুক্তকরণ।
স্মার্ট গভর্মেন্ট এর অংশ হিসেবে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল সেন্টারভিত্তিক ওয়ানস্টপ সেবা কেন্দ্র এবং প্রকল্পের কাজে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পিপিএস এবং আরএমএস সফটওয়্যার এবং স্মার্ট গভর্মেন্ট বাস্তবায়নে চালু করা হয়েছে অনলাইন রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট (আরএমএস) সিস্টেম।
কেমন হবে ২০৪১ সালের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জাপানী উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) সহযোগিতায় ইতোমধ্যে প্রণয়ন করেছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১’। (সূত্রঃ স্মার্ট বাংলাদেশ: আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ)। প্রকৃতপক্ষে, এস্তোনিয়ার ‘ই-আইডি’, ভারতের ‘আধার কার্ড’, কোরিয়ার চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নীতি ও উদ্যোগসহ যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিশ্বের তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রগামী বিভিন্ন দেশের উত্তম পদক্ষেপগুলো (বেস্ট প্র্যাকটিস) ভালো করে যাচাই করে এ মাস্টারপ্ল্যানটি তৈরী করা হয়েছে যার মূল কথা হচ্ছে, আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি), রোবটিকস, ব্লকচেইন, ন্যানো টেকনোলজি, থ্রি-ডি প্রিন্টিং এর মতো আধুনিক ও নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্য, পরিবহন, পরিবেশ, শক্তি ও সম্পদ, অবকাঠামো, অর্থনীতি, বাণিজ্য, গভর্ন্যান্স, আর্থিক লেনদেন, সাপ্লাই চেইন, নিরাপত্তা, এন্টারপ্রেনারশিপ, কমিউনিটিসহ নানা খাত অধিকতর দক্ষতার দ্বারা পরিচালনা করা হবে। দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রচলন করা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্পসহ মোট ৪০টি মেগাপ্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে এই আইসিটি মাস্টার প্লানে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের অবদান অন্তত ২০ শতাংশ নিশ্চিত করা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশ বান্ধব পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল গ্রহণ করছেন এই আইসিটি মাস্টার প্ল্যান -২০৪১ এ । এই পরিকল্পনা ও নীতি-কৌশলে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগ গুলোকে স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিত করা হচ্ছে। প্রযুক্তিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রবেশগম্যতা ও অভিযোজন, যা স্মার্ট বাংলাদেশের চার স্তম্ভের বাস্তবায়ন এগিয়ে নেওয়ার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তুলতে ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে আইসিটি ডিভিশন। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার, তা বাস্তবায়নে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মতো অবকাঠামো অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। আগামীর তরুণ প্রজন্মেও মেধা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর।
সরকারের এবারের ফোকাস হচ্ছে কেউ পিছিয়ে থাকবে না ( leaving no one behind) যেমনটি রয়েছে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভিষ্টের (Sustainable Development Goal-SDG) মূল কথায়। এ কারণে, ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি’। প্রকৃতপক্ষে, আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে গেলে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব এর অগ্রাধিকার টেকনোলোজি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিকস, আইওটি ও সাইবার নিরাপত্তা হবে মূল বিষয় এবং এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে।
পরিশেষ বলা যায় যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে ভিত্তি তৈরি করে গেছেন, সে পথ ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এক যুগের বেশি পথচলায় প্রমাণিত হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক উন্নয়ন দর্শন। এখন সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’এ রূপান্তর করা। এক্ষেত্রে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে যদি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি , তাহলে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর নির্ভর করে আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলা সম্ভবপর হবে মর্মে আমরা আশাবাদী।