সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত: সোমবার, জানুয়ারী ১৫, ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টারঃ পৌষের শেষ এসে শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশায় নাকাল হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। কনকনে হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। শিশু ও বৃদ্ধরা এই শীতে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এমন পরিস্থিতিতেও উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা যায়নি সরকারী ও বে-সরকারীভাবে কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসুচী।
কুয়াশা ও শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার সাথে নেমে আসা হিমেল হাওয়া কনকনে ঠান্ডার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সময়মত কাজে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষেরা। সন্ধ্যার পর থেকে চারদিক কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র লোকজন সীমাহীন কষ্ট ও দুর্দশায় দিন পার করছে। বিশেষ করে নদ-নদীর অববাহিকার হতদরিদ্র মানুষদের দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে।
সন্ধ্যার পর জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন দৈনন্দিন খেটে খাওয়া কর্মজীবীরা। বিত্তবানরা গরম কাপড় ক্রয় করতে পারলেও নিম্ন আয়ের লোকজনের তা হাতের নাগালের বাইরে। ফলে শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। শীতে বোরো বীজতলা, সবজি খেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষকেরা। দিনমজুর ওয়াকিল আহমেদ বলেন, গত দুদিন থেকে প্রচন্ড শীত আর কন কনে ঠান্ডা। এর আগে এ রকম শীত দেখা যায়নি।
আবহাওয়া অফিসের সূত্রমতে, রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আগামীতে আরও কমতে থাকবে।
তাপমাত্রা কম হওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। নভেম্বর শুরুর দিকে শীত তেমন না হলেও হঠাৎ কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে তাপমাত্রা। শহরে চেয়ে গ্রাম এলাকায় প্রচুর শীত।জেলা হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়েরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে মানুষ। এদের মধ্যে শিশুরোগীর সংখ্যা বেশি। রাতে বেশি মাত্রায় ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। রাতভর বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরতে থাকে। সন্ধ্যা থেকে ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে ছিল কুয়াশার পরিমাণ।
এদিকে, গত এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বে-সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে ঠান্ডা জনিত রুগী ভর্তি হয়েছেন। যার অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। গত ২৪ ঘণ্টায় শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক শিশু ও শীতজনিত অন্য রোগে দেড়শত জন বেশি রুগী বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বে-সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। হাসপাতালগুলোর বহিঃ বিভাগেও বেড়েছে শীতজনিত রোগীর ভিড়।
কুয়াশার সঙ্গে শৈত্য প্রবাহের ঠান্ডা বাতাসে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষসহ গৃহপালিত পশুপাখি এবং ফসলের ক্ষেত।
কুয়াশায় ফসলের ক্ষেতেও নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। কৃষকরা সবজি ক্ষেতে এবং আমনের বীজতলায় শীত সহনীয় বিভিন্ন কীটনাশক স্প্রে করছেন। কিন্তু ঘন কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহের কারনে তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।
আব্দুল জব্বার বলেন, দুদিন প্রচুর শীত আর কনকনে ঠান্ডা পড়ছে। এর আগে এরকম শীত দেখা যায় নি।
সকালে কাজে বের হওয়া সাদিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিনের ঠান্ডায় কাবু হয়ে গেছি। ঠান্ডায় বাধ্য হয়ে কাজে বের হতে হচ্ছে। কাজ না করলে তো আর সংসার চলবে না।
খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সবিজুর রহমান জানান, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত নিউমোনিয়া আক্রান্ত বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ শীতজনিত রোগীদের সেবা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেছেন, শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। শীতবন্ত্র চাহিদা আরো দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরো বরাদ্দ আসবে। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি শীতার্থ মানুষের পাশে যেতে।