বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত: বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টারঃ বুধবার সকাল নয়টার নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আন্তর্জাতিক মানের ক্যাডেট সিস্টেমে পরিচালিত আরবি ও জেনারেল শিক্ষার সমন্বয়ে রিয়াদুল জান্নাহ্ হিফয্ মাদরাসায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদদের স্মরণে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শহীদদের স্মরণে দোয়া পরিচালনা করেন মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও তত্ত্বাবধায়ক বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মুফাসসিরে কুরআন মুহাদ্দিস আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন মাদরাসার উপদেষ্টা মানবাধিকার সংগঠক নাগরিক নেতা এস এম দেলোয়ার হোসেন।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি?”
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু ঝরা এ ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি?
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলতে পারি ।
ত্যাগ ছাড়া; আত্মবলিদান ছাড়া স্বাধীনতা আসে না। শহীদের আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা ‘বাংলা’। ১৯৫২-এর ভাষা শহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাঁথা। ৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। লাল তাজা রক্তে রাঙা অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি রক্তের প্লাবনের মধ্য দিয়ে আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস গৌরবময় আসনে আসীন। শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা এবং মানুষের মতো বাঁচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণা সৃষ্টির চির অনির্বাণ শিখার দীপ্তিতে দিগন্ত উদ্ভাসিত করেছে পবিত্র ২১শে ফেব্রুয়ারি। ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাঙালিকে শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান । জাতি হিসেবে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে মহত্তর স্বাধীনতার চেতনা। ২১শে ফেব্রুয়ারি কীভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করলো? ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার জন্যে রাজপথে আন্দোলন হয়। পাকিস্তানি সরকারি বাহিনীর গুলিতে নিজের তাজা প্রাণ বলিদান দেয় বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। সালাম-বরকত-রফিক-শফিক-জব্বার আরও কত নাম না-জানা শহীদের আত্মত্যাগে আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের প্রাণের বাংলা ভাষা। জাতিসংঘের স্বীকৃতির ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। দিনটি ছিল ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেসকোর ৩০তম অধিবেশন বসে। ইউনেসকোর সেই সভায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়। ফলে পৃথিবীর সব ভাষাভাষীর কাছে একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি পায়। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা লাভ করে বিশেষ সম্মান। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। ২১ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করার আগে, দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দাবি ওঠে। এ বিষয়ে প্রথম সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক মাতৃভাষা-প্রেমিকগোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী প্রথমে ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ নামে একটি দিবস ঘোষণার প্রস্তাব উপস্থাপন করে। সেখানে তাঁরা বলেন, বাঙালিরা তাদের মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সেটা ছিল তাদের ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সেজন্যেই যুক্তিযুক্ত দৃষ্টিতে একে দেখতে হবে। মাতৃভাষা-প্রেমিকগোষ্ঠীর এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ৭ জাতি এবং ৭ ভাষার ১০ জন সদস্য। জাতিসংঘ মহাসচিবের অফিস থেকে এই পত্রপ্রেরকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল; এ বিষয়ে নিউইয়র্কে নয়, যোগাযোগ করতে হবে প্যারিসে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংগঠন ইউনেসকোর সঙ্গে। এরপর প্রায় এক বছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ইউনেসকো। কানাডাপ্রবাসী বাঙালি আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম (যাঁরা মাতৃভাষা-প্রেমিকগোষ্ঠীর সদস্য) এ বিষয়ে ইউনেসকোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১৯৯৯ সালের ৩ মার্চ ইউনেসকো সদর দপ্তরের ভাষা বিভাগের কর্মকর্তা আন্না মারিয়া একটি চিঠিতে রফিকুল ইসলামকে জানানো হয়, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার তোমাদের অনুরোধটি বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন কর্মকর্তার কাছে এই প্রথম বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। আন্না মারিয়া আরও জানান, বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে উত্থাপনের কোনো সুযোগ নেই, ইউনেসকোর পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের মাধ্যমে সভায় এটি তুলে ধরা হবে। রফিকুল ইসলামকে ইউনেসকো পরিচালনা পর্ষদের কয়েকটি সদস্য দেশের ঠিকানাও পাঠিয়ে দেন মারিয়া। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, কানাডা, ফিনল্যান্ড ও হাঙ্গেরির নাম ছিল। ইউনেসকো সাধারণ পরিষদে বিষয়টি আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হলে কয়েকটি সদস্য দেশের পক্ষে প্রস্তাব পেশ করা জরুরি। তখন হাতে সময় ছিল খুবই কম। কারণ, কিছুদিনের মধ্যেই সাধারণ পরিষদের সভা বসবে। কানাডা থেকে রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য গর্বের বিষয় মনে করে মন্ত্রণালয় অতি দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর অফিসে অনুমতি চেয়ে নোট পাঠায়। বাংলাদেশ সরকারের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময়স্বল্পতার বিষয়টি উপলব্ধি করেন। তিনি সব ধরনের জটিলতা উপেক্ষা করে নথি অনুমোদনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ছাড়াই ইউনেসকোর সদর দপ্তরে সরাসরি প্রস্তাবটি পাঠিয়ে দেন। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ইউনেসকো কমিশনের পক্ষে এর সচিব অধ্যাপক কফিলউদ্দিন আহমদের স্বাক্ষরিত সেই প্রস্তাবটি প্যারিসে পৌঁছায় ।