রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রকাশিত: সোমবার, আগস্ট ৪, ২০২৫
এস এম দেলোয়ার হোসেন
মানুষের পক্ষে প্রকৃতি সৃষ্টি করা সম্ভব নয় এটা একান্তই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। মানুষ কেবলমাত্র প্রকৃতির সেবা কিংবা উন্নয়ন করতে পারে। আর মানুষ যত কিছুর নতুন উদ্ভাবন ঘটায় সব কিছু প্রকৃতি থেকে আসে। প্রকৃতি হচ্ছে জীবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ বাঁচার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন, আলো, বাতাস ও খাদ্যসহ আরো অনেক মূল্যবান উপাদান যার প্রত্যেকটি উপাদান আসে প্রকৃতি থেকে। এসব উপাদান না থাকলে মানুষ বাচাঁ সম্ভব হতোনা অথচ আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উপায়ে এই প্রকৃতিকে ধ্বংস করে যাচ্ছি। প্রকৃতিকে বাঁচানো না গেলে আমদের বেঁচে থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়বে এবং প্রাকৃতিক ভাবেই এই মহাবিশ্ব জগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। কেউ পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এ বিশ্বকে বাঁচিয়ে পরিবেশকে সংরক্ষণ করার অঙ্গীকার নিয়ে জনসচেতনতার মাধ্যমে প্রকৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৮ জুলাই বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস পালিত হয়ে আসছে।
প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক প্রকৃতিকে কেন সংরক্ষণ করা জরুরী কিংবা প্রকৃতি আমাদের কি বা দেয়। কথায় আছে যে যাকে যত ভালো ভাবে চিনে-জানে সে তাকে তত ভালো করে মানে। প্রকৃতি কেন সংরক্ষণ করব সেটা বুঝতে হলে আগে জানতে হবে প্রকৃতি আসলে কি? প্রকৃতি আমাদের কি দেয়? এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা দরকার, তাহলেই আমরা প্রকৃতিকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠতে বাধ্য।
প্রথমে প্রকৃতিকে জানতে হবে, প্রকৃতি বলতে এই পৃথিবী তথা সমগ্র সৃষ্টিকে নির্দেশ করে। প্রকৃতি বলতে মানব সৃষ্ট নয় এমন দৃশ্য-অদৃশ্য বিষয় এবং জীবন ও প্রাণকে বুঝায়। যেমন মানুষ প্রকৃতির একটি উপাদান। তাছাড়া গাছ-পালা , সূর্যের আলো , মাটি , বায়ু , পানি , নদী-নালা , পশু-পাখি , পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি সকল বস্তুই হচ্ছে প্রকৃতির উপাদান। এককথায় প্রকৃতি সকল কিছুই সৃষ্টিকর্তার দ্বারা সৃষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত।
এরপর জানতে হবে প্রকৃতি থেকে আমরা কি পেয়ে থাকি বা কি উপকারে আসে-
জীবন ধারণের জন্য কত উপাদান না লাগে। আর এসব উপাদানের প্রায় সব গুলো নিরবিচ্ছিন্ন যোগানদাতা হল প্রকৃতি। প্রকৃতি আমাদেকে খাদ্য থেকে শুরু করে, ওষধ, পানীয় জল, বাড়ি-ঘর নির্মাণের উপকরণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহ কি না দেয়.। প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেনের যোগান দেয় প্রকৃতি। নবায়ন যোগ্য জ্বালানির প্রধান উৎস প্রকৃতি যা আমরা প্রতিনিয়ত ব্যাবহার করছি।
শুধু বস্তুগত উপাদান দিয়ে প্রকৃতি আমাদের কাজে লাগে তা নয়, বরং অবস্তুগত উপাদান দিয়েও প্রকৃতি আমাদের শান্তি প্রদান করতে সক্ষম। আমরা যখন বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ হয়ে অস্বস্তি অনুভব করি তখনি ছুটে যাই খোলামেলা বাতাসের স্থানে। শুধু তাই নয় আনন্দ ভ্রমণের জন্য জায়গা বাছাই করতে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত স্থানকেই বাছাই করি, ভ্রমণ টানে ছুটে যাই পাহাড়, সমুদ্র, মরুভূমি, ঝর্ণাসহ প্রকৃতিক অপূর্ব লীলাভূমির পানে। গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পাই পক্ষান্তরে গাছ আমাদের ত্যাগ করা কার্বনডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রকৃতি আমাদের এত কিছুতে অবদান রাখছে এককথায় আমরা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।
প্রকৃতিকে রক্ষা করা আমাদের অনেক জরুরী। প্রকৃতিকে কিভাবে রক্ষা করতে হয় তা জানতে হলে প্রয়োজন কিভাবে আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি।
প্রথমত আমরা পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে প্রকৃতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। মানুষের প্রতিদিনের জীবনধারায় পরিবেশ অবান্ধব কার্যকলাপের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে দূষণ। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে আমাদের পরিবেশ আজ হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে। প্রকৃতির বাতাসে এখন দূষণের গন্ধ ভাসে, নদীর পানি এখন বহমান নেই নদীর পরিনতি এখন নর্দমার মতন। বন উজার করে এখন আমরা বসতি স্থাপন করছি। আজ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, জলাভূমি ধ্বংসের মুখে,প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উজাড় করে গড়ে উঠছে আবাদি ভূমি। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে ময়লার স্তুপ জমিয়ে ফেলি। যেখান থেকে দূষন ছড়িয়ে যায় পরিবেশে আর সেখান থেকে নিশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরিরে। পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছি অথচ পাহাড়ের উপরে ভর করে দাঁড়িয়ে এই ধরনী। বর্তমান চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি প্রকৃতি ধ্বংস করে। পৃথিবীর ভারসাম্যের জন্য সকল প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ থাকা প্রয়োজন। অথচ আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এর হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১হাজার ৬১৯ প্রজাতির প্রাণী বাংলাদেশ থেকে দ্রুতই বিলুপ্ত হয়ে যেতে চলেছে এবং (IPBES) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী পৃথিবীতে ৮০ লক্ষ উদ্ভিদ ও প্রাণীজ প্রজাতি বিলুপ্তি হওয়ার পথে।
প্রকৃতি ধ্বংসের কারনে জীবমণ্ডলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বৃক্ষ নিধনের কারনে বিশ্বের তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাপমাত্রা প্রতিবছরের রেকর্ড প্রতিবছর ভেঙে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের তারতম্য দেখা দিচ্ছে। বর্ষা শেষ হওয়ার পথে কিন্তু বর্ষায় যেই পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা সেই পরিমাণ বৃষ্টির দেখা নেই বললেই চলে। পানির অভাবে কৃষক চাষাবাদ করতে পারছেনা। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মানব দেহে বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছি। এক দিকে আমরা বৃক্ষ নিধন করছি অন্য দিকে অপরিকল্পিত নগরায়ন-শিল্পায়ন গড়ে তুলছি। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ায় এন্টার্কটিকা মহাদেশের বরফ গলার পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণার ফলাফল বলছে এভাবে তাপমাত্রা বাড়লে সিঙ্গাপুরসহ নিম্নাঞ্চলী অনেক দেশ একটা সময় পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। গ্রীন হাউস ইফেক্টের কারনে পৃথিবীর উপরের আবরন ফেটে গিয়ে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি পৃথিবীর মধ্যে ঢুকে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এসব কিছুই প্রকৃতির উপর ধ্বংসযোগ্য চালানোর কারনেই হচ্ছে বা হবে।
প্রকৃতির উপর এই ধ্বংসলীলা থামানো না গেলে জনজীবন বিপন্ন ও পৃথিবী হুমকীর সম্মুখীন হবে।