বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

খুলনা নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: শুক্রবার, জুন ১৩, ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টারঃ নিউজপ্রিন্ট মিলস্ সহ সকল শিল্প কলকারখানার সম্পদ পাচার, লুটপাট, দূর্নীতি ও অবৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ, বন্ধ সকল শিল্প কলকারখানা চালু, শ্রমীকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ এবং শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবীতে খুলনা নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলন ১২ জুন, ২৫ বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মোঃ বাবুল হাওলাদার। সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আ ফ ম মহসীন এর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্য গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেলের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নিজামউর রহমান লালু, সিপিবি নেতা মিজানুর রহমান বাবু,আইন ও অধিকার বাস্তবায়ন ফোরামের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি এস এম দেলোয়ার হোসেন, আমরা বৃহত্তর খুলনা বাসীর সাধারণ সম্পাদক সরদার আবু তাহের, খুলনা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি ( কেডিএস) এর চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শিমুল, নিরাপদ সড়ক চাই ( নিসচা) র খুলনা মহানগর সভাপতি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডাঃ সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, আমরা বৃহত্তর খুলনা বাসীর সহ-সভাপতি শেখ ওমর ফারুক কচি,এস এম মিজানুর রহমান, নতুনতারা সমাজকল্যাণ ও সাহিত্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাইফুর রহমান মিনা, খুলনা
নিউজপ্রিন্ট মিলের শ্রমিক নেতা এস এম রফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান, কবি ও সাংবাদিক রহমত আলী, দৈনিক শিরোনাম এর সম্পাদক ও প্রকাশক বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক ইফফাত সানিয়া ন্যান্সি, খুলনাঞ্চল পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক মোঃ মোসলেহউদ্দিন তুহিন, দৈনিক চৌকস এর খুলনা বিভাগীয় সম্পাদক মোঃ শাহীন হাওলাদার, খুলনা হার্ডবোড মিলস্ বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মোঃ জহিরুল ইসলাম জব্বার, সম্প্রতি সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সাঈদা পারভিন, মানবাধিকার উন্নয়ন প্রকল্প ( এইচ আর ডি পি) এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ জামাল মোড়ল, শিরোমণি যুব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক প্রমি আক্তার লিজা, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য মোস্তফা সাব্বির হাসান বাপ্পী প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানের অজুহাতে করোনার মতো স্মরণকালের ইতিহাসের দুনিয়াব্যাপী সর্ববৃহৎ দুর যুগের মধ্যে ২০২০ সালের ২ জুলাই রাতের অন্ধকারে তৎকালীন সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে, গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের পেটুয়াবাহিনী দ্বারা একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ২৬ টি পাটকল বন্ধ করে দেয়। যার মধ্যে খুলনা অঞ্চলের ৯ টি পাটকল রয়েছে। ফলশ্রুতিতে চাকরি হারান ২৬ হাজার স্থায়ী ,অস্থায়ী শ্রমিক। বেকার হয়ে যান এবং নিদারুণ অর্থ সংকটে পড়েন এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট কয়েকগুণ মানুষ। রাষ্ট্র হারায় প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প তথা বুনিয়াদি উৎপাদন খাত। তৎকালীন সরকার শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে লিজের মাধ্যমে এই খাতটি আধুনিকায়ন করে পরবর্তী ত মাসের মধ্যে পূণরায় চালুর ঘোষণা দেয়। মূলত এটি ছিল শ্রমিক অসন্তোষ এবং কারখানা চালুর দাবীতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধের একটি অপকৌশল মাত্র। যা তৎপরবর্তী অদ্যাবধি কার্যক্রম দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান।তারও পূর্বে লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।একই অজুহাতে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
একইভাবে সরকারের মূলনীতির কারণে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় ব্যক্তি মালিকানাধীন সোনালী জুট মিল,২০১৩ সালে এজাক্স জুট মিল, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আফিল জুট মিল,২০১৪ সালের ১৭ জুলাই মহসিন জুট মিল,২০১৬ সালে জুট স্পীনার্স বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও ১৯৯৩ সালের ১৯ জুন খুলনা টেক্সটাইলস মিল,২০১০ সালে ১৮ আগষ্ট বন্ধ করে দেয়া হয় দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী ,এর পূর্বে বিএমসি বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানি,কোরাইশী স্টিল মিল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও এ অঞ্চলের চিংড়ি রপ্তানিকারক কারখানা ও লবণ শিল্পের দশা করুন। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয় বিপুল পরিমাণ জমি,ভৌত অবকাঠামো, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি। এহেন ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে জাতীয় সম্পদের উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে কায়েমি স্বার্থবাদী একশ্রেণীর লুটেরাগোষ্ঠির । শুরু হয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন লুটেরা পর্যন্ত সর্বমহলে লুটতরাজের এক হরিলুট খেলা। কখনো লিজের নামে,কখনো টেন্ডারের নামে, এভাবে বিভিন্ন নামে বেনামে শুরু হয় এখানকার মূল্যবান সম্পদ পাচার – লুটপাট। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পূর্বেকার চলমান দূর্নীতি আরো ক্ষিপ্র গতিতে। যার অপদৃষ্টির শিকার বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায় সকল কলকারখানা গুলো। ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের যন্ত্রপাতি স্ক্রাপ দেখিয়ে তৎকালীন রাজনৈতিক অপশক্তির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে নাটকীয় ও ষড়যন্ত্রমূলক টেন্ডারের মাধ্যমে ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ ৬৮,৭৩,০০,০০০ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়,যা অপসারণ বা পাচারের কাজ চলমান। টেন্ডার প্রাপ্ত ঠিকাদার বিগত সরকারের আমলে সব যন্ত্রপাতি পাচার করতে না পারায় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পরোক্ষভাবে ক্ষমতাইদের ম্যানেজ করে অব্যাহত রেখেছেন এই পাচার কর্মকান্ড। এছাড়াও যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ ( জে জে আই) খালিশপুর ক্রিসেন্ট জুট মিলের সম্পদ ও পাচার প্রক্রিয়া চলমান। যার প্রতিবাদ করতে যেয়ে ইতোপূর্বে অতীতের ন্যায় যশোরের বর্তমান প্রশাসন দ্বারা মারাত্মক হয়রানির শিকার হয়েছেন স্থানীয় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, শিল্প কলকারখানার জাতীয় তথা জনগণের এই মহামূল্যবান সম্পদ, শুধু সম্পদই নয় এর সাথে জড়িয়ে আছে জাতীয় ঐতিহ্য, অজস্র মানুষের আবেগ- অনুভূতি । এর সাথে আরও জড়িত আবেগময় সংস্কৃতি, কৃষি, উৎপাদন আরো অনেক কিছু। যার আর্থিক মূল্যও নির্ধারণ করা অসম্ভব। আমাদের দাবী ১ নিউজ প্রিন্ট মিলের অবৈধ টেন্ডার বাতিল, লুটপাটকারী, নাটকীয় ষড়যন্ত্রমূল এ টেন্ডার এর সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা এবং টেন্ডারের নামে ইতো পূর্বে পাচার হয়ে যাওয়া সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে ফেরত প্রদান।২. বন্ধ সকল কারখানা আধুনিকায়ন করে চালু এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। ৩. শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিষদ, ৪. লুট পাটের প্রতিবাদকারী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ, ৫. পাটকল রক্ষা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য ও রুপরেখা প্রদান। পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে নিউজ প্রিন্ট মিলসহ অন্যান্য মিলের লুটপাট চূড়ান্তভাবে বন্ধ না হলে তথা উপরোল্লেখিত ৫ দফা দাবি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না পেলে আমরা রাজপথে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

আরো পড়ুন