সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত: রবিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
নাগরিক সংবাদ ডেস্কঃ বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের সভা-সমাবেশের অধিকার, সুষ্ঠ নির্বাচন প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক কাঠামো নিয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র। ঠিক এমন সময়ে বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই বলে বিবৃতি দিয়েছে রাশিয়া। আর এ কর্মে ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ ও জার্মান রাষ্ট্রদূতও যুক্ত রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছে দেশটি। এমনকি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়াকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সঙ্গে তুলনা করেছে রাশিয়া।
এদিকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস প্রশ্ন তুলেছে, জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসরণ করে রাশিয়া অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর থাকার বিষয়টি তারা ইউক্রেনের ক্ষেত্রে অনুসরণ করেছিল কি না।
কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যখন একের পর এক কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তনে ব্যস্ত। তখন দেশ দুটির দ্বন্দ্ব এবার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বাংলাদেশে।যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া শীতল লড়াই থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ ইস্যুতে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বাংলাদেশকে প্রভাবিত করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অকুণ্ঠ সমর্থন আদায়ের পথেও হাঁটছে। যদিও এই মুহুর্তে বাংলাদেশকে দেশ দুটির অবস্থান গভীর পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার একের পর এক বিবৃতি, টুইট ও পাল্টা তর্ক-বিতর্কে হুটহাট করে বাংলাদেশের জড়িয়ে পরা ঠিক হবেনা।
বাংলাদেশে ইস্যুতে মূল ঘটনার সূত্রপাত ১৪ ডিসেম্বর। এদিন সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় গিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার বাইরে একদল লোক তাকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
এরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূত জরুরী ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ছুটে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ প্রসঙ্গে পরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, শাহীনবাগে ঘটনায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। নিরাপত্তা নিয়ে তিনি একটু দুশ্চিন্তায় আছেন। রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, অধিকতর নিরাপত্তা চাইলে আমরা আপনাকে ও আপনার লোকদের নিরাপত্তা দেবো।
ঘটনার পরদিন ১৫ ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে ডেকে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ঢাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে উষ্মা প্রকাশ এবং তার নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানান। ওই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশটি।
২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমকে ফোন করেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়েন্ডি শারম্যান। তিনি রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সর্বস্তরের কর্মীদের নিরাপত্তা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের তাগিদ দেন। শারম্যানকে শাহরিয়ার আলম বলেছেন, কোনো বিষয়ে জনসম্মুখে মন্তব্য করার আগে রাষ্ট্রদূতদেরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে জানা জরুরি। তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেতে থাকবেন।
২০ ডিসেম্বর ঢাকায় রাশিয়া দূতাবাসের এক এক বিবৃতিতে বলা হয়, যারা নিজেদের বিশ্বের শাসক বলে মনে করে, তারা ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ রক্ষার অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। গণতন্ত্র সুরক্ষা বা অন্য কোনো অজুহাতে বাংলাদেশসহ তৃতীয় কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে রাশিয়া বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশের মতো অনেক রাষ্ট্র বিদেশি শক্তির নেতৃত্ব অনুসরণ না করে তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থের জন্য তাদের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতি গঠন করে, তারা একই পথ অনুসরণ করে। আমরা এ দেশগুলোর আকাঙ্ক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করি।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়াকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে ধরার চেষ্টাকে ‘প্রত্যাশিত’ উল্লেখ করে বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার কথা বলে ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ২২ ডিসেম্বর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে করা মারিয়া জাখারোভার মন্তব্য ২৫ ডিসেম্বর প্রচার করে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির দূতাবাস।
এর এক দিন পর ২৩ ডিসেম্বর ওই বিবৃতি নিয়ে পাল্টা একটি টুইট করে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। টুইটে মার্কিন দূতাবাস প্রশ্ন তুলেছে, জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসরণ করে রাশিয়া অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর থাকার বিষয়টি তারা ইউক্রেনের ক্ষেত্রে অনুসরণ করেছিল কি না।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঘটনা নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, একটি ঘটনা বা আচরণ সেই সম্পর্ক রিমুভ করে ফেলবে, সেই সম্ভাবনা আমরা দেখি না। এতে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাবও পড়বে না। স্পর্শকাতর এলাকায় চলাফেরা করতে হলে কূটনীতিকদের অনুমতি নিতে হয়। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম। তবে ঢাকার মধ্যে কূটনীতিকদের চলাফেরায় কোনো অনুমতি লাগে না। তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন।