মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত: রবিবার, আগস্ট ২০, ২০২৩
নাগরিক সংবাদ ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয় ভার্চুয়াল আদালত। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবং বিচারপ্রার্থীদের দুরবস্থার কথা ভেবে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে আদালত কর্তৃক ‘তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০’ (২০২০ সনের ১১ নং আইন) আইনের দ্বারা।
তবে এবার আর করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নয়, বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ, তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোন ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানীসহ মামলার যেকোন পর্যায়ে আবশ্যকরণীয় ক্ষেত্রে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এক্ষেত্রে কিছু ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করতে হবে। আদালত কর্তৃক ‘তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০’ (২০২০ সনের ১১ নং আইন) -এর ৫ ধারার ক্ষমতা বলে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ সংক্রান্ত ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ জারি করেছেন।
রোববার (২০ আগস্ট) দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। প্রধান বিচারপতি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
দেশের বাহিরে থেকেও অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকা যাবে। এখানে আদালত প্রান্ত ও দূরবর্তী প্রান্তকে একত্রিত করবেন সমন্বয়কারী। অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং বলতে আদালত কক্ষ থেকে দূরবর্তী কোন স্থানে অবস্থানরত মামলার কোন পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ এবং মামলার সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তির তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অডিও-ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে মোকদ্দমায় উপস্থিতি, সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানীসহ সকল বিচারিক কার্যসমূহ বিচার কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করা বোঝাবে।
বিচারিক কার্যক্রম ও আদালত কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রমের সকল পর্যায়ে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার করা যাবে। অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং -এর জন্য আদালতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধিবিধান সাক্ষ্য রেকর্ড করার জন্য আদালত কর্তৃক নিযুক্ত কমিশনার এবং অনুসন্ধানকারী বিচারকের ক্ষেত্রে ও প্রয়োজনীয় অভিযোজন সাপেক্ষে প্রযোজ্য হবে।
আদালত প্রান্ত এবং দূরবর্তী প্রান্তে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল ডিভাইস এবং প্রিন্টার; নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার ডিভাইস; ক্যামেরা; মাইক্রোফোন এবং স্পিকার; প্রদর্শন ইউনিট; গোপনীয়তা নিশ্চিত করে পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা; পর্যাপ্ত আলো; একটি শান্ত এবং নিরাপদ স্থানের প্রাপ্যতা।
আদালত প্রান্ত থেকে একজন এবং দূরবর্তী প্রান্তে একজন সমন্বয়কারী থাকবে। আদালত প্রান্তে আদালত নিজে অথবা আদালত কর্তৃক মনোনীত একজন সমন্বয়কারী হিসেবে থাকবে।
আর দূরবর্তী প্রান্ত দেশের বাহিরে হলে বাংলাদেশী সংশ্লিষ্ট কনস্যুলেট/দূতাবাস/হাই কমিশনের একজন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হবেন। দূরবর্তী প্রান্ত কারাগার হলে সমন্বয়কারী হবেন সংশ্লিষ্ট কারাগারের জেল সুপারিনটেনডেন্ট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। হাসপাতাল থেকে যুক্ত হতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃক মনোনীত যেকোন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হতে পারবে।
এছাড়া সেফ হোম, প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা যেকোন প্রতিষ্ঠান যেখানে ‘আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু’ বা ‘আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশু’ কে রাখা হয়েছে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কোন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হতে পারবে।
‘নিরাপত্তামূলক হেফাজত’ যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৩১ ধারার অধীনে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে নারী বা শিশুকে রাখা হয়েছে সেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কোন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হতে পারবে।
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড বা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসার বা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সমন্বয়কারী হবে। ফরেনসিক ল্যাবরেটরি হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মনোনীত কোন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হতে পারবে। এছাড়া অন্য যে কোন স্থানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আদালত কর্তৃক মনোনীত যেকোন ব্যক্তি সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
আদালতে ভার্চুয়াল উপস্থিতি প্রয়োজন এমন কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন দূরবর্তী প্রান্তে থাকে যেখানে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা অনুপস্থিত, তখন সংশ্লিষ্ট আদালত দূরবর্তী প্রান্তের স্থানীয় এখতিয়ার সম্পন্ন জেলা জজকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করবেন নিকটবর্তী এবং উপযুক্ত স্থান থেকে একটি অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য।
মামলা সংশ্লিষ্ট পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ এর আবেদনক্রমে বা আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে যেকোন মামলার যেকোন পর্যায়ের কার্যক্রম অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।
এরূপ আবেদনপ্রাপ্তি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানির পর, আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন যে, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং এক্ষেত্রে আবশ্যিক কি না। আবেদন মঞ্জুর করা হলে আদালত অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের জন্য সময়সূচী নির্ধারণ করবেন।
অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের আবেদনে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিতি শুনানী অথবা সাক্ষ্য গ্রহণের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সনাক্তকরণের সুবিধার্থে জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, টেলিফোন নম্বর, ইমেইল আইডি সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। জেলা হাজতে আটক অভিযুক্ত বা সাক্ষীর ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।
আদালত প্রান্তের সমন্বয়কারী অডিও-ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারীগণের ইমেইল আইডি/মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে মিটিং লিংক/মিটিং আইডি/পাসওয়ার্ড (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) প্রেরণ করবেন।
অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণের পূর্বে দূরবর্তী প্রান্তে উপস্থিত অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সাক্ষীকে উক্ত স্থান থেকে অডিও-ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে আদালত প্রান্তে সংশ্লিষ্ট বিচারক কর্তৃক শপথ পাঠ করাতে হবে।
পরীক্ষা শেষ হলে গৃহীত সাক্ষ্যে আদালত প্রান্তে সংশ্লিষ্ট বিচারক এবং পক্ষগণের প্রতিনিধি (যদি থাকে) দ্বারা স্বাক্ষরিত হবে এবং এটির স্ক্যানকপি দূরবর্তী প্রান্তে সমন্বয়কারীর অফিসিয়াল ইমেইলে পাঠানো হবে। দূরবর্তী প্রান্তের সমন্বয়কারী গৃহীত সাক্ষ্যের প্রিন্ট আউট নিয়ে তাতে পরীক্ষিত ব্যক্তির স্বাক্ষর নেবেন এবং নিজে স্বাক্ষর করবেন। এরপর এটির স্ক্যান কপি আদালত প্রান্তে ইমেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করবেন এবং হার্ডকপি পরবর্তী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালত বরাবরে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র সহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে প্রেরণ করবেন।
অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং কার্যক্রম শেষ হলে, আদালত আদেশনামায় কনফারেন্সিং এর সময় ও স্থায়িত্বকাল উল্লেখ করবেন এবং কনফারেন্সিং এ ব্যবহৃত সফটওয়্যার/প্লাটফরম এর নাম উল্লেখ করবেন। এছাড়া আদালত কনফারেন্সিং কালে এর অডিও, ভিডিও এবং সংযোগের বিষয়ে তার সন্তুষ্টি আদেশে উল্লেখ করবেন।