মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে পোশাক খাতের দায়িত্বে থাকা পুলিশের ইউনিট

প্রকাশিত: বুধবার, মার্চ ২৯, ২০২৩

নাগরিক সংবাদ ডেস্কঃ ঈদুল ফিতরে যেসব তৈরি পোশাক ও শিল্প কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারবে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করতে যাচ্ছে শিল্প পুলিশ। এ ছাড়া বেতন-বোনাসকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা যাতে কোনও ধরনের উসকানিমূলক ফাঁদে পা না দেয়, সে ব্যাপারেও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে পোশাক খাতের দায়িত্বে থাকা পুলিশের এই ইউনিট।

ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো পোশাক ও শিল্প কারখানাগুলোর ওপর নজরদারি জোরদার করেছে। যেসব পোশাক ও শিল্প কারখানার বিষয়ে নেতিবাচক তথ্য আসছে, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। পরে পর্যালোচনা করে সমস্যা সমাধানে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা।

তবে সব ধরনের শঙ্কা ও বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। শিল্প পুলিশ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছেএসব তথ্য।

শিল্প পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রমজান মাস ও ঈদকে কেন্দ্র করে বেতন-বোনাসের কারণে শ্রমিকদের কোনও ধরনের উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তাদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তৈরি পোশাক ও শিল্প কারখানার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এরই মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর নেতারাও এসব বিষয়ে নিজস্ব নজরদারির কথা জানিয়েছেন।

শিল্প পুলিশ সূত্র বলছে, শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক অসন্তোষে জড়িত কোনও স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন বা ষড়যন্ত্র, গুজব, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, ছুটি সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে অগ্রিম তথ্যাদি সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএ-সহ বিভিন্ন শ্রমিক নেতার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে শিল্প পুলিশ। শ্রমিক অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হওয়ার আগেই শিল্প পুলিশ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিশৃঙ্খলা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

শিল্প পুলিশ বর্তমানে সাতটি জোনে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এর মধ্যে আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট—এই সাতটি জোনে পোশাক ও শিল্প কারখানা রয়েছে ৯ হাজার ১৭৭টি। যেখানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ৪৩ লাখ ৮ হাজার ৫২১ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যে বিদেশি নাগরিক আছেন ৫ হাজার ১৪৩ জন। এসব কারখানার শ্রমিক অসন্তোষসহ বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ও বিদেশিদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন মামলার তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শিল্প পুলিশের সদস্যরা।

এ পর্যন্ত ৩৪০টি মামলার মধ্যে ২৩২টি মামলার অভিযোগপত্র এবং ৫৮টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হয়েছে। তদন্তাধীন রয়েছে আরও ৪৬টি মামলা। ভবিষ্যতে ১৫টি জোনে কলেবর বাড়িয়ে ১৭ হাজার ১৭৪টি পদ সৃজনের লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পুলিশ সদস দফতরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে, যা অনুমোদনের জন্য বিবেচনাধীন রয়েছে।

ব্যবসায়ী সংগঠনের ক্রেতারা বলছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক তৈরি পোশাক ও শিল্প কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারেন না, যে কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার উদ্ভব হয়। রমজান মাস শুরু হয়েছে কয়েক দিন হলো। সময় আরও বাকি আছে। তারপরও আগে থেকেই এ বছর এসব বিষয় নিয়ে সংগঠনের নেতারা তৎপর রয়েছেন। পোশাক খাত নিয়ে কোনও মহল যেন কোনও ধরনের গুজব কিংবা ফায়দা লোটার সুযোগ না পায়, সেসব বিষয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। শ্রমিকরা কারও উসকানিতে পা দেবেন না বলে ব্যবসায়ী ও পোশাকমালিকদের আশ্বস্ত করেছেন।

বিজিএমইএর এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেকটাই চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে পোশাক ও শিল্প কারখানার মালিকরা এসব বিষয় নিয়ে একটু বেশি চিন্তিত।

তবে তিনি দাবি করে বলেন, শ্রমিকরা আগের চেয়ে অনেক বুদ্ধিসম্পন্ন হয়েছেন। তারা এখন বুঝতে পেরেছেন আগে বাইরে থেকে কিংবা রাজনৈতিক ইন্ধনে অস্থিরতা সৃষ্টি করা যেতো, এখন আর তা সম্ভব হয় না শ্রমিকদের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে। আগের মতো শ্রমিকদের প্রলুব্ধ করা যায় না। দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে কিন্তু তার মধ্যেও তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকনেতারা যারা আছেন, তারা এখন দায়িত্বশীলতার মধ্যে থেকে কথা বলেন। আগের মতো উসকানিমূলক কোনও কথাবার্তা বলেন না। ধারণা করি, এবার বেতন-বোনাসের কারণে কোনও ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।

শিল্প পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুর রহমান বলেন, কোন কোন পোশাক ও শিল্প কারখানা ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারবে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। একটি তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া কেউ যেন কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা চলমান রেখেছে শিল্প পুলিশ। গোয়েন্দা ইউনিট প্রতিটি জায়গায় কাজ করছে।

ব্যবসায়ী সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি ও ক্লাসিক ফ্যাশন কনসেপ্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম শিল্পকারখানা ও পোশাক খাতের সব ধরনের বিষয় পর্যালোচনা করবে। আর্থিক সক্ষমতাসহ সব বিষয় মনিটরিং টিম নজরে রাখছে। কোন গার্মেন্টস কী পরিমাণ বেতন-বোনাস দিতে সক্ষম হবে আদৌ পুরোপুরি সব বেতন-বোনাস দিতে পারবে কি না, সে বিষয়টি ২০ রমজানের দিকে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

বিজিএমইর পরিচালক ও তুসুকা ফ্যাশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল দিপু বলেন, অন্যান্য বারের থেকে এবার একটু বেশি সতর্ক রয়েছি আমরা। সক্ষমতা শুধু শিল্প কিংবা পোশাক কারখানার মধ্যে রয়েছে তা নয়, সক্ষমতা আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে। আমরা শুধু ব্যবসা করি না ব্যাংকগুলো আমাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

তিনি আরও বলেন, ক্রাইসিস মোমেন্টটা হয় রমজানের ১৫ থেকে ২০-এর পর। এ সময় আমাদের তারল্য সংকট হবে কি না, ব্যাংকগুলো থেকে ডলারের বিষয়গুলো নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে ভাবতে হয়। করোনার সময় সরকার আর্থিকভাবে ব্যবসায়ীদের যে সহায়তা করেছে, সেই সহায়তা যদি আরেকটু করা হয়, তাহলে কোনও সমস্যা হবে না আশা করছি।

অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

আরো পড়ুন