মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত: সোমবার, মার্চ ২৭, ২০২৩
নাগরিক সংবাদ ডেস্কঃ দেশে বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা ধরনের টয়লেট্রিজ সামগ্রীর দামও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক মাসের ব্যবধানে সাবান, শ্যাম্পু, টিস্যুসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম বেড়েছে অনেক।
ব্যবসায়ীরা জানান, যদিও অধিকাংশ পণ্যের মোড়কে দাম নির্ধারিত থাকে তারপরও এখন প্রতিদিন দাম নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তর্ক-বিতর্ক এমনকি মনোমালিন্যও হচ্ছে।
রবিবার (২৬ মার্চ) সকালে কথা হয়, বড় মগবাজার এলাকায় ‘মা মনি’ স্টোরের প্রোপ্রাইটর মো. মঞ্জুর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, নিত্য-প্রয়োজনীয় খাবার পণ্যের চেয়ে টয়লেট্রিজ পণ্যের ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে অনেক বেশি।
গত এক-দেড় মাস ধরে যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বেড়ে চলেছে ট্রয়লেট্রিজ পণ্যের মূল্য। ফলে অনেক ক্রেতা বাড়তি দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতে না পেরে কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবহারের পরিমাণও। দাম বেশি হচ্ছে তাই বিক্রি কম হচ্ছে। সাধারণ ভোক্তাদের অনেকেই এখন আমদানি করা দামি পণ্যের পরিবর্তে দেশীয় কম দামি পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লাক্স সাবান যেটা ৭০ টাকা ছিল সেটা এক মাসের ব্যবধানে এখন ৮০ টাকা, লাইফবয় সাবান যেটা ৬৫ টাকা ছিল সেটা এখন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মেরিল সাবান যেটা ছিল ৪৫/৫০ এখন সেটা ৫৫ টাকা। বসুন্ধরা টয়লেট টিস্যু এক মাস আগে ছিল ২২ টাকা এখন বিক্রি করছি ২৫ টাকা, ফ্রেশ টিস্যু আগে ১৭/১৮ টাকা কিনে ২২ টাকায় বিক্রি করা হতো এখন ২৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
অ্যারোসল স্প্রে বড় সাইজ আগে ছিল ৫২০/৫৩০ টাকা এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০০ টাকা। দাম বেড়েছে বেশি সানসিল্ক শ্যাম্পুর (বোতল)। এক মাসে আগে যেটা ছিল ৪০০ টাকা এখন সেটা ৫০০ টাকা, ট্রেসেমি শ্যাম্পুর মূল্য এক মাস আগে ছিল ৪২০ টাকা এখন সেটা দাম বেড়ে ৫২০ টাকা। হারপিক ১ লিটার আগে ছিল ১৬৫/১৭০ এখন সেটা ১৮৫ টাকা।
দাম বেড়েছে জিলেট ব্লেডেরও। এক পাতা ৬ পিসের দাম ছিল ৩০ টাকা এখন সেটা বেড়ে ৪০ টাকা। প্রাণের তরল দুধ ১ লিটার আগে ছিল ১১০ টাকা এখন সেটা ১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়। হুইল গুড়ো পাউডার ১ কেজি আগে ১৩৫ টাকা থাকলেও এখন সেটা বিক্রি করা হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। এয়ারফ্রেসনার স্প্রের মূল্যও কম যায় না। আগে যার মূল্য ছিল ২৪০/২৪৫ টাকা এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ২৮০ টাকা।
পানিকে জীবন বলা হয়। সেখানেও ব্যবসা থেমে নেই, চলছে অতিমুনাফা। হাফ লিটার পানি (অ্যাকুয়াফিনা ও কিনলে) এক মাস আগেও ছিল ১৫ টাকা, এখন সেটা ২০ টাকা। ফ্রেশ পানির বোতল ৮ লিটার যেটা ছিল ১০০ টাকা এখন সেটা ১০৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ক্রেতা স্বপন রায় বলেন, ‘সাংবাদিক ভাই আপনার কাছে বললে কি কম দামে কিনতে পারব? আমাদের আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই। কোনো শান্তি নেই। শান্তির মা হারিয়ে গেছে। তাই বুঝে বা না বুঝে সবাই বলছেন, নিত্যপয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে। কিন্তু একটি বারও তারা বলছেন না যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে তো টয়লেট্রিজও পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘টয়লেট্রিজ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এতে আমার মতো মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ এসব পণ্যের ব্যবহার কমাচ্ছে। এইভাবে মাসে মাসে বাড়তে থাকলে একসময় হয়তো ব্যবহার করতেই পারব না। যার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়বে। আমি মনে করি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতা কাজ করছে বেশি। আর এ কারণেই বাজারে টয়লেট্রিজ পণ্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা প্রতি মাসে।’
এদিকে রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকার বাসিন্দা আয়েশা খানম বলেন, ‘সাবান, শ্যাম্পু, কাপড় ধোয়ার গুঁড়া সাবান, চুলে ব্যবহার করার তেল, ঘর পরিষ্কারের বিভিন্ন জিনিসের মূল্য গত এক মাসের মধ্যে বেড়েছে অনেক। এখন বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। শ্যাম্পুর দাম অনেক বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে এসব পণ্যের পেছনে সংসার খরচ তিন হাজার টাকা বেড়েছে। প্রত্যেকটা জিনিসেই এখন পাঁচ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’