সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এক দশক পরে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায় যা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: রবিবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২২

নাগরিক সংবাদ ডেস্কঃ চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার (৪ নভেম্বর) নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে ৪টার দিকে বক্তব্য শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। প্রায় ৫০ মিনিটের বক্তব্যে তিনি রাজনীতি, জামায়াত-বিএনপির সহিংসতা ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন। নাগরিক সংবাদের পাঠকদের জন্য সরকারপ্রধানের বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

সমাবেশের মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, আন্নেরা ক্যান আছুন, বেজ্ঞুন গম আছেননি? তোয়ার লাই য়ার পেট পুড়ে তাই আমি আইছি। সবসময় আপনাদের কথা মনে হয়। চট্টগ্রাম আমাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। আমার আব্বা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) জেল থেকে বের হলেই আমাদেরকে চট্টগ্রাম বেড়াতে নিয়ে আসতেন। ৬১ সাল থেকে অনেকবার এসেছি। তাই চট্টগ্রামের কথা সবসময় মনে পড়ে। এখানেই এলেই মনে পড়ে সব নেতাকর্মীর কথা। এখানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। করোনার কারণে দীর্ঘদিন জনসভা করতে পারিনি, তাই আজকে আপনাদের কাছে এসে হাজির হয়েছি।

এই লালদীঘির ময়দানের কোর্ট বিল্ডিংয়ের ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি জনসভা করতে গিয়েছিলাম। সেই সভায় নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল তখনকার এরশাদ সরকার। কিন্তু আমি অবাক হয়ে যাই, সেই জনসভায় গুলি চালানোর দায়িত্ব যে নিয়েছিল রকিবুল হুদা, সেই রকিবুল হুদাকে প্রমোশন দিয়েছিল খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াও নিশ্চয় সেই হামলায় জড়িত ছিল। না হলে তাকে পুলিশ প্রধান করতো না। সেই ২৪ জানুয়ারি গুলি করে আমাদের ৩০ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে। সেদিন আমিও গুলির আঘাতে মারা যেতে পারতাম, কিন্তু নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে আমাকে রক্ষা করে। সেই সময় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়।

জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের কত নেতাকে হত্যা করেছে। বিমান বাহিনী, সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার ও সৈনিককে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের মৌলভী সৈয়দকে তুলে নিয়ে দিনের পর দিন নির্যাতন করে হত্যা করে। একইভাবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে হত্যা করেছে খালেদা জিয়াও। খুব বেশি দিন আগের কথা না, ২০০১-এর নির্বাচনের পর চট্টগ্রামের অনেকেই বিএনপির তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এই তারা দিতে পারে এর বেশি কিছু দিতে পারে না। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে কারা ক্ষমতায় এসেছে? সেই স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকারের দোসর, জাতির পিতার খুনিরা। যে কারণে বাংলাদেশ আর সামনে এগোতে পারেনি।

জাতির পিতার নেতৃত্বে এই মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। আমরা বিজয়ী জাতি। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা, আদর্শ আমরা ধারণ করি। তবে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই আদর্শকে বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। এমনকি যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে লাখো শহীদ বুকের রক্ত দিয়েছে, সেই স্লোগানও নিষিদ্ধ করেছিল ওই খালেদা জিয়া গংরা জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। আজকে জয় বাংলা স্লোগান ফিরে এসেছে। জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে।

আমি বিজয়ের সামনে আপনাদের সামনে এসেছি। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করেছিল, সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তাকে গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণে যে নির্দেশ জাতির পিতা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে মান্য করেছিল এবং সেভাবেই যুদ্ধ করে বিজয় লাভ করি। ঠিক পরাজয়ের আগে ওই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর ইত্তেফাকের সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিনকে তারা তুলে নিয়ে যায়। এমন বহুজনকে তুলে নিয়ে ১০ ডিসেম্বর থেকে তারা বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে এই দেশ যেন সামনে চলতে না পারে সেই কথা মাথায় রেখেই এই ঘটনা তারা ঘটায়।

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব একটা তারিখ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল বলেই তারা নাকি ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সড়ক দখল করবে আর আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে। আমি তাদের একটা কথা বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল। আর ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল বলেই তাকে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয় নাই। সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছিল। জনতার মঞ্চ করেছিলাম আমরা। খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। ৩০ মার্চ অর্থাৎ দেড় মাসও টিকতে পারেনি। সে কথা বিএনপির মনে রাখা উচিত। জনগণের ভোট যদি কেউ চুরি করে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। তারা ভোটে যেতে চায় না। তারা ভাবে, জিয়াউর রহমান যেভাবে জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল তারাও সেভাবে ক্ষমতায় যাবে। গণতান্ত্রিক ধারা বিএনপি পছন্দ করে না। আজকে গণতান্ত্রিক ধারা আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। দীর্ঘদিন গণতন্ত্র আছে বলেই এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

আজকে এই বিজয়ের মাসে আমি আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ আগে ২৯টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। ছয় প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। এটা বিজয়ের মাসে চট্টলাবাসীর জন্য আমার উপহার। এরপর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর নাম উল্লেখ করেন।

আমরা উন্নয়ন করি, মানুষের কল্যাণে। আর বিএনপি মানুষ খুন করে মিথ্যা কথা বলে আর বিভ্রান্ত করে- এটাই তাদের কাজ। তারা গ্রেনেড ও বোমা মারতে পারে। এই চট্টগ্রামেও তারা বারবার গুলি চালিয়েছি গ্রেনেড মেরেছে। বাংলাদেশজুড়ে ৬৩টা জেলায় ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা করেছে। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস এগুলো তারা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে তারা শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তারা মানুষের শান্তি চায় না। ক্ষমতায় থেকে কী করেছে, দুই হাতে লুটপাট। অর্থপাচার করেছে, নিজেরা অর্থসম্পদের মালিক হয়েছে।

জিয়াউর রহমান যখন মারা যায় তখন বলা হয়েছিল কিছুই রেখে যায়নি। একটা ভাঙা সুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছু ছিল না। আমার প্রশ্ন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসতে না আসতে হাওয়া ভবন খুলে তার ছেলে যে চাঁদাবাজি ও অর্থপাচার করেছে- রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে- এগুলো কোথা থেকে এলো। ভাঙা সুটকেসটা তো আর জাদুর বাক্স হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে, দেশের স্বাধীনতা এনেছে। আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে। যখন থেকে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, এই চট্টগ্রামে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আমরা করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক করেছি। এই মহাসড়ককে আমরা ছয় লেনে উন্নীত করবো। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার আমরা রাস্তা নির্মাণ করে দিচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে রেল লাইন করছি। কক্সবাজারেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করছি। এই চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, মেরিন অ্যাকাডেমি- এমন কোনও প্রতিষ্ঠান নাই আমরা করে দেই নাই। প্রত্যেকটা জেলা উপজেলায় আমরা সরকারি কলেজ করে দিয়েছি। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখা পড়া করতে পারে। তারা বিএনপি জামায়াতের মতো খুনি, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা হবে না। তারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হবে।

আজকে খালেদা জিয়া কারাগারে কেন? বিদেশ থেকে টাকা এসেছে এতিমের জন্য। সেই টাকা আর এতিমের হাতে যায়নি। সব নিজেরা পকেটে ঢুকিয়েছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলা করেছে। সেই মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে। তার ছেলে একটা তো (আরাফাত রহমান কোকো) মারা গেছে। তার পাচার করা টাকা আমরা সিঙ্গাপুর থেকে কিছুটা এনেছি। আরেকজন (তারেক রহমান) কুলাঙ্গার বানিয়ে রেখেছে জিয়াউর রহমান। সে এখন লন্ডনে বসে আছে। সে গেলো কেন লন্ডনে? ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে পালিয়েছিল। সেখানে রাজার হালে থাকে। আর দেশের ভেতরে যত বোমাবাজি, খুনখারাপি, নাশকতা সবগুলো সেখানে বসে পরিচালনা করে।

আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আপনারা জানেন, জাতির পিতা রাঙামাটিতে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র করে গেছেন। আমরা স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করে বাংলাদেশকে স্যাটেলাইট জগতে নিয়ে গেছি। আজকে সমগ্র বাংলাদেশে আমরা ব্রডব্যান্ড ও ইন্টারনেট চালু করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সমগ্র বাংলাদেশে আমরা ডিজিটাল ফোন দিয়েছি। আপনাদের হাতে ফোন আছে না? কে দিয়েছে এই ফোন, আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা দিয়েছি, বিএনপির আমলে না। বিএনপির সময়ে একজন মন্ত্রী ছিল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আপনাদের চট্টগ্রামেরই লোক। সে একটা মোবাইল ফোনের কোম্পানি খুলেছিল। একটা মোবাইল ফোন কিনতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা লাগতো, আর এক মিনিট ফোন করতে ১০ টাকা লাগতো। ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যেত না। আওয়ামী লীগ সরকার এসে এই মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। যাদের কাছে ল্যাপটপ নাই, মা-বোনেরা প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বছরের পর তারা বিদেশে থাকে, আগে দেখতে পারতো না, এখন পারে। কে করেছে এটা? আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা প্রযুক্তি ও শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিটা স্কুলে ডিজিটাল ল্যাবরোটরি খুলে দিচ্ছি। বিএনপি কী করেছে? ওই বোমাবাজি, ২১ আগস্ট, ২০০৪ সাল। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড মেরেছিল। আমাদের ছাত্রলীগ নেতা তুষারকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা র‍্যালি করতে গিয়েছিলাম, সেখানে আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা করলো। সেই হামলায় আমাদের আইভি রহমান মারা গেছে। মোট ২২ জন নেতা মারা গিয়েছিল সেদিন। আমাকে মানবঢাল তৈরি করে আমার নেতাকর্মীরা বাঁচিয়েছিল। সেদিন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ১৩টা গ্রেনেড মারা হয়েছিল। আমি হয়তো বেঁচে নাও থাকতে পারতাম না।

খালেদা জিয়ারা পারে মানুষ হত্যা করতে। তারা পাকিস্তানের দোসরদের সঙ্গে এক হয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আর আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা এলে মানুষ শান্তিতে থাকে। ২০১৪-তে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। ২০১৩ থেকে শুরু করলো অগ্নিসন্ত্রাস। লঞ্চে, ট্রেনে, বাসে, রাস্তায় আগুন। তিন হাজার মানুষ অগ্নিসন্ত্রাসে আহত হয়েছে। ৫০০ মারা গেছে। সাড়ে তিন হাজার গাড়ি তারা পুড়িয়েছে। তার সঙ্গে লঞ্চ-ট্রেন আছে। যাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে তারা এভাবে মানুষ মারতে পারে না। তাদের আন্দোলন হচ্ছে মানুষ খুন করা। তাদের গুণ দুটি- ভোট চুরি আর মানুষ খুন। তারা জানে, নির্বাচন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তাই তারা নির্বাচন চায় না। তারা চায় সরকার উৎখাত করে এমন কিছু আসুক যা তাদের নাগরদোলায় করে ক্ষমতায় বসায় দেবে। তারা জনগণের তোয়াক্কা করে না। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি।

আমরা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি, রিজার্ভ কত ছিল? ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা কষ্ট করে রিজার্ভ বাড়ালাম। আমাদের গ্যাস বেচার মুচলেকা দিয়ে ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসে কীভাবে মানুষ খুন করেছে। আপনাদের চট্টগ্রামে আমাদের এমন কোনও নেতাকর্মী নাই যাদের ওপর হামলা করেনি। তাদের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। হত্যা করতে তারা ভালো পারে। এটাই করে গেছে তারা। মানুষের জন্য তারা কোনও কাজ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে দেশের উন্নতি হয়। আমরা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসি মাত্র পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ ছিল। সেটাকে ৪৮ বিলিয়নে নিয়েছিলাম।

পৃথিবীর কোনও উন্নত দেশে বিনা পয়সায় কাউকে করোনার ভ্যাকসিন দেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে, আমি দিয়েছি- রিজার্ভের টাকা থেকে নগদ টাকায় কিনে। রিজার্ভের টাকা আমরা খরচ করেছি। বিনা পয়সায় মানুষকে খাবার দিয়েছি। বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। শ্রমিক ও কৃষকদের হাতে টাকা পৌঁছে দিয়েছি। আমরা ওষুধ, ভ্যাকসিন ও সিরিঞ্জ কিনেছি। স্পেশাল প্লেন পাঠিয়ে এগুলো এনেছি। কেন এনেছি? আমার দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। এখনও সেই করোনা ভ্যাকসিন ও পরীক্ষা আমরা বিনা পয়সায় করি। কই, ওই আমেরিকা, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে কেউই বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয় না। আমরা দিচ্ছি জনগণের জন্য। আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের সেবা করা।

খালেদা জিয়ার বাজেট কত ছিল ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আমরা এবার ছয় লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়েছি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এত বাজেট দিতে পারতো? পারতো না। আমরা সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি। আমরা প্রত্যেকটা কাজ গণমুখী করেছি। বিএনপি তো করেইনি, উল্টো মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। তারা ২০০১-এ অপারেশন ক্লিনহার্ট শুরু করে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগের বহু নেতাকর্মীকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তারপর সেই হত্যাকারীদের ইন্ডেমনিটি দেওয়া হয়েছে পঁচাত্তরের মতো। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে যেসব মানুষকে হত্যা করেছে এবং আগুনে দগ্ধ যেসব পরিবার আজকে ধ্বংসের পথে, এর জবাব একদিন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দিতে হবে। জবাব দিতে হবে, কেন অগ্নিসন্ত্রাস করে তারা মানুষ হত্যা করেছে। এই হিসাব জনগণ নেবে।

আজকে বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। আমরা সব ভূমিহীনকে ঘর করে দিচ্ছি। ঠিকানা দিচ্ছি তাদের। ৩৫ লাখ মানুষ আমরা ঘর করে দিচ্ছি বিনা পয়সায়। বিএনপি কি দিয়েছে কখনও? এতিমের টাকা যারা মেরে খেয়েছে তারা কি মানুষকে দেয়? দেয় না। এই পার্বত্য চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান কী অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছিল, সেখানে প্রতিনিয়ত সংঘাত হতো। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা সেখানে শান্তিচুক্তি করি। মাত্র কয়েক দিন আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৫টি রাস্তা আর সারা বাংলাদেশে একসঙ্গে ১০০টি সেতু আমরা উদ্বোধন করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জন্য কল্যাণ আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে।

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকার আছে, এই আইন জাতির পিতা করে গেছেন। আমার প্রশ্ন বিএনপির কাছে, কিন্তু বিএনপি এই আইন ও অধিকার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ কেন নেয়নি। এই যে সমুদ্রে আমাদের অধিকার এটা তারা জানেই না। বাংলাদেশকে চেনে না। জানবে বা কেমনে, জিয়ার জন্ম কলকাতায় আর পড়াশোনা করেছে করাচিতে। করাচি থেকে কমিশনে সেনাবাহিনীতে ঢুকে পোস্টিংয়ে বাংলাদেশে আসে। এরা তো জানার কথা না, ওই জ্ঞানও তাদের নেই। একটা তো মেট্রিক ফেল, আরেকটা এইট পাস, আরেকটা কোনোমতে ইন্টার পাস। সমুদ্রসীমা আইন কী তারা জানবে কী করে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেই সমুদ্রসীমা জয় করেছি। আজ সেগুলো আমাদের কাজে লাগবে। আমাদের অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।

বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে ফিরে এসেছি বাংলার মানুষের কাছে এই জন্য যে এই দেশের মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা হবে, শিক্ষা হবে, উন্নত জীবন পাবে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী দেশ, সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। আমরা যেন সেভাবে বাংলাদেশকে গড়তে পারি। আমরা আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চাই। কারণ, যাতে যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

আরো পড়ুন