মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রকাশিত: বুধবার, আগস্ট ১৬, ২০২৩
নাগরিক সংবাদ ডেস্কঃ চালু হলো সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। রবিবার (১৩ আগস্ট) এ সংক্রান্ত বিধিমালা জারির মাধ্যমে এটি চালু করা হয়। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এ অনুষ্ঠানে দেশের তিনটি জেলা প্রশাসন ও বিদেশে একটি বাংলাদেশি দূতাবাস ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফার সই করা ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা-২০২৩’ জারি করা হয়েছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও বিধিতে উল্লেখ হয়েছে। এই হিসেবে বিধিমালার প্রজ্ঞাপন গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা চালু বলে বিবেচিত হবে।
এর আগে সরকার দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ প্রণয়ন’ করে। ওই আইনের বিধান অনুযায়ী এ বিধি জারি হলো।
বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘প্রবাসী স্কিম’; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি স্কিম’; স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য ‘সুরক্ষা স্কিম’ এবং স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য ‘সমতা স্কিম’ চালু হবে। প্রত্যেকে তার জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন। চাঁদাদাতা যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন।
প্রতিটি স্কিমের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে মাসিক পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হবে। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) সব নাগরিক পেনশন স্কিমে নিবন্ধিত হতে পারবেন। অবশ্য বিশেষ বিবেচনায় ৫০ ঊর্ধ্ব নাগরিকও এ স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন এক বছর চাঁদা প্রদান শেষে যে বয়সে উপনীত হবেন, তার থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। এক্ষেত্রে চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর হওয়া পর্যন্ত চাঁদা প্রদান করবেন। এরপর থেকে নির্ধারিত হারে পেনশন পাবেন। কোন স্কিমে এবং কী পরিমাণ চাঁদা দিলে মাসিক কত টাকা করে পেনশন পাবেন, সেটাও উল্লেখ রয়েছে বিধিমালায়।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি না থাকলে পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন, তবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এনআইডি গ্রহণ করে জমা দিতে হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ সাপেক্ষে পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারীকে অনলাইনে নিবন্ধন হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেককে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে।
অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড বা তফসিলি ব্যাংকে চাঁদা জমা দেওয়া যাবে। জরিমানা ছাড়া পরবর্তী একমাসের মধ্যে চাঁদা দেওয়া যাবে। তবে এর বেশি সময় অতিবাহিত হলে প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ বিলম্ব ফি গুনতে হবে। পর পর তিন মাস চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাব স্থগিত হবে। সব বকেয়া পরিশোধ না হলে তা সচল হবে না।
কোনও চাঁদাদাতা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন বা নিখোঁজ হলে, যেসব বিধান কার্যকর হবে সেটাও উল্লেখ রয়েছে বিধিমালায়।
চাঁদাদাতা নিজের এবং পরিবারের প্রয়োজনে চিকিৎসা, গৃহনির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানদের বিয়ের জন্য তহবিলে জমাকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন। তা নির্ধারিত ফিসহ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে, যা তার হিসাবে জমা হবে। একটি ঋণ চলমান থাকতে নতুন করে ঋণ নেওয়া যাবে না।
কোনও স্কিমের চাঁদাদাতা পেনশনে থাকাকালে তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে, তার নমিনি বা উত্তরাধিকারীরা ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত অবশিষ্ট মাসের জন্য মাসিক পেনশন পাবেন। কোনও চাঁদাদাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়ার আগে মারা গেলে, তার নমিনি বা অবর্তমানে উত্তরাধিকারী মুনাফাসহ জমাকৃত অর্থ ফেরত পাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ১৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিল উদ্বোধন করবেন। সেদিনই আমাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে নিবন্ধন করা যাবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অবিলম্বে কার্যকর বলতে এটাকে ইমপ্লায়েড বলতে হবে। তবে, যত দূর জানি শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।’
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ১৭ আগস্ট সকাল ১০টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। তিনি ঢাকায় গণভবন থেকে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, রংপুর জেলা ও সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ‘সর্বজনীন পেনশন’ উদ্বোধন করবেন।